আমরণ: ব্যক্তি পর্যায়ের স্যাক্রিফাইস থেকে রাষ্ট্রের জন্য আত্মত্যাগের গল্প
সিনেমার নাম: আমরণ
ভাষা: তামিল
প্ল্যাটফর্ম: নেটফ্লিক্স
অভিনয়: সাঁই পল্লবী, রাহুল বোস, শিবা কার্তিকায়ন।
বলিউডে বেশ কয়েকটি কাল্ট ক্ল্যাসিক মুভি রয়েছে যার মূল ভিত্তি জম্মু-কাশ্মীর কিংবা ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তের বৈরি সম্পর্ক। বীর-জারা তো পাইওনিয়র উদাহরণ হয়ে থাকবে। কিন্তু বছরের পর বছর এই একই বিরোধ জিইয়ে রেখে মুভি তৈরির প্রবণতা একটা সময় বিরক্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকখানি এমন দাঁড়িয়েছিলো ইস্যুটা ঘরে পোষা মুরগির মতো, প্রয়োজন হলেই জবাই দাও। নির্বাচনের আগে দেশ প্রেমের সুড়সুড়ি লাগবে, ভারত পাকিস্তান ইস্যু করে মুভি বানিয়ে ফেল।
সবাই যখন এই টপিকে বিরক্ত ঠিক তখনই মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির যুবরাজ দুলকার সালমান এবং ম্রুণাল ঠাকুরকে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো-সীতা রামাম। যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতা থেকেও মিষ্টি প্রেমের গল্পকে দর্শক প্রাণ ভরে উপভোগ করেছিলো। এ বছর তাই সাঁই পল্লবীর ‘আমরণ’ নিয়ে আগ্রহ ছিলো তুঙ্গে। দেখার বিষয় ছিলো সেই একই ধাঁচে নাকি নতুন কোন অবতারে হাজির হয়েছে আমরণ?
গল্প সংক্ষেপ:
মেজর মুকুন্দ। ৪৪ রাজপুত রেজিমেন্টের চৌকষ মেজর। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় মুকুন্দের মনে আগ্রহ জন্মায় সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। কি ভাবছেন পরিবার খুব খুশি? মুকুন্দ তার পরিবারের একমাত্র ছেলে। মা বেঁকে বসে ছেলেকে কিছুতেই সেনা কর্মকর্তা হতে দেবেন না। এর মাঝে ইন্দু ভার্গিসের সাথে পরিচয় হয় মুকুন্দের। আলাদা ধর্ম, আলাদা গোত্রের হয়েও ভালবাসাটা হয়ে উঠে শীতের নরম রোদের মতো। ইন্দুর পরিবার বাধ সাধলেও চার হাত এক হয়। মুকুন্দ, আলতাফ বাবার মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ঘায়েল করে ফেলে। জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে রেজিমেন্টে। কিন্তু ছোট্ট একটা ভুলে পুরো গ্রুপসহ মুখোমুখি হয় ভয়ংকর পরিস্থিতে। আদৌ মুকন্দ কি সামলাতে পারে? নাকি মেনে নেয় কঠিন বাস্তবতা?
মেজর মুকুন্দের চরিত্রে শিবা দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। বয়স অনুযায়ী বেশ কয়েকটি লুকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। যা মুগ্ধ হবার মতো। একজন মানুষ একই সাথে যে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করে সেটাও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন সন্তান হিসেবে তার যে এপ্রোচ আবার বাবা হিসেবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেমিক হিসেবে যতটা আবেগী, নেতৃত্বের সময় ততটাই কঠোর।
সাঁইয়ের কথা কি বলবো! একজন অভিনেত্রী এত ন্যাচারাল অভিনয় কিভাবে করেন আমি জানি না। মনে হয়েছে এই চরিত্রে সাঁই ছাড়া অন্য কেউ সেকেন্ড থট হতেই পারেন না। আমি মুগ্ধ হয়েছি সাঁইয়ের কান্নার দৃশ্যগুলো দেখে। রাহুল বোস এত সাবলীল তামিল বলেন, জানতাম না। কুল মাইন্ডের, গ্রুপ লিডারের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন।
মুভিতে যেমন কাশ্মীরের বৈরিতা দেখানো হয়েছে, সাদা চোখে কারণটাও তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। একজন মেজর প্যারালালভাবে শুধু দেশের জন্য স্যাক্রিফাইস করেন তা নয় বরং ব্যক্তিজীবন যে কি পরিমাণ স্যাক্রিফাইস করেন তা প্রতিটি পরতে পরতে জানান দিয়েছেন। ইন্দু-মুকুন্দের এই স্যাক্রিফাইস একজন দর্শক হিসেবে আপনি কানেক্ট করতে পারবেন। মুভিতে দেখানো কোন কিছুই আরোপিত মনে হয়নি। মনে হয়েছে দর্শক হিসেবে কতগুলো মানুষের পাওয়া না পাওয়া, সুখ-দু:খের উপাখ্যান দেখছি।
আমি নিজে মুভি দেখতে দেখতে ডিফেন্স ফোর্সে চাকরি করা অনেকের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম। ডিফেন্সের মানুষদের এই ডেডিকেশন স্যালুট করার মতো। চমৎকার গল্প আর নিখুঁত অভিনয়ের কম্বিনেশন দেখতে চাইলে আজই দেখে ফেলতে পারেন ২০২৪ এর আলোচিত মুভি ‘আমরণ’।
রেদওয়ানুল হোসেন