বাগানভিলা: দুর্ঘটনা, হারানো স্মৃতি আর কিছু অমীমাংসিত রহস্যের উন্মোচন
সিনেমার নামঃ বাগানভিলা
ভাষাঃ মালায়লাম
প্ল্যাটফর্মঃ সনি লিভ
অভিনয়ঃ ফাহাদ ফাসিল, জ্যোতির্ময়, কুঞ্চাকো বোবান।
ভালো থ্রিলার মুভির বড় বৈশিষ্ট্য পর্দায় যতটা থ্রিল দেখানো হচ্ছে দর্শক তার চেয়ে বেশি থ্রিল অনুভব করবে।
দর্শক একের পর এক অনুমান করে যাচ্ছে, পরবর্তী দৃশ্য নিয়ে ভাবছে সেই মুভিটা আসলে এনগেজিং বলা যায়। সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তির পর আলোচনায় আসা ‘বাগানভিলা’ আসলে সেই ধরনের এনগেজিং মাইন্ড গেম মুভি ছিলো।
জনরা হিসেবে থ্রিলার কিন্তু উপস্থাপন বেশ ভিন্ন রকম। তাড়াহুড়ো ছিল না। ধীরে সুস্থে দর্শককে যেন রহস্যের লুপের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। দৃশ্যর পর দৃশ্য এসেছে। মানুষ অনুমান করার চেষ্টা করেছে। একদম সোজা সাপ্টা কোন মুভি নয়। দম নিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে গল্পের গভীরে প্রবেশ করার মতো।
গল্প সংক্ষেপঃ
মধ্যরাতে ঘুমন্ত সঙ্গীকে নিয়ে গাড়িতে করে ফিরছিলেন ডা. রয়েস। হঠাৎ দ্রুত বেগে ছুটে আসার ট্রাকের ধাক্কায় মুহুর্তে এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। তারপর কেটে যায় আরও কয়েকটি বছর।
ডা. রয়েস সুস্থ স্বাভাবিক থাকলেও তার স্ত্রী স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এতটাই বাজে অবস্থা, কাজ করতে করতে ভুলে যান কি করছিলেন। স্বামী, সন্তান আর কাজের মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে চিনতেও পারেন না।
এর মধ্যে একদিন বাসায় হানা দেয় পুলিশ অফিসার ডেভিড কোশি। তারা উল্লেখ করেন সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার মেয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে হারিয়ে গেছেন।
সিসিটিভি ফুটেজ বলছে হারিয়ে যাওয়ার আগে মেয়েটি রয়েসের স্ত্রীর সাথে শেষবার দেখাও করেছে। পুলিশের জেরায় রয়েসের স্ত্রী স্বীকারও করে নেয় সে মেয়েটিকে চিনে কিন্তু কিভাবে চিনেছে বা ঐ কলেজে কিভাবে গিয়েছে সেটা মনে করতে পারে না। এরমধ্যে নিখোঁজ হয় আরও এক তরুণী। এই নিখোঁজের পেছনে আসলেই কি রয়েসের স্ত্রীর কোন ভুমিকা রয়েছে? গল্পটির সাথে বাগান বিলাসেরই বা কি সম্পর্ক? কেন রয়েসের স্ত্রী শুধু বাগান বিলাসের ছবি আঁকেন? সিনেমার শেষে জটিল ধাঁধার রহস্য ভেদ করে কোন সত্য সামনে আসে?
মুভিতে ডা. রয়েস চরিত্রে বোমান যতটা সাবলীল ছিলেন, পুলিশ অফিসার ডেভিড কোশি চরিত্রে ফাহাদ ফাসিলকে ঠিক ততটায় নিষ্প্রভ লেগেছে।
গল্পের সাথে দর্শকদের যুক্ত করার বিষয়টা জোরালো ছিলো। শুরুতে একটু স্লো মনে হলেও গল্প যত এগিয়েছে, রহস্যের চোরাবালিতে দর্শক ডুবে যেতে শুরু করেছে।
মুভিটা একটানে দেখার মতো। মুভিতে আলাদা করে মনে রাখার মতো ছিলো বেশ অনেকগুলো বাগান বিলাসের পেইন্টিংস। এত সুন্দর ছিলো। ন্যাচারাল বাগান বিলাসের শটটাও টপনচ ছিলো।
বারবার ভুলে যাওয়ার কষ্টটা জ্যোতির্ময়ের অভিব্যক্তিতে দারুণভাবে ফুটে উঠে ছিলো। বোমান তার রহস্যঘেরা চরিত্র দিয়ে বেশ সিরসিরানি একটা ভয় জাগিয়েছেন।
মুভিটা শুরু থেকে যে পরিমাণ ইনটেন্স করে ফেলেছিল কিন্তু ফিনিশিংটা সেই তুলনায় জোরালো হয়নি। ফিনিশিং এ আরও চমকপ্রদ কিছু থাকতে পারতো। থ্রিলার হিসেবে ভালো কিন্তু মনে দাগ কাটার মতো হয়নি। শেষটুকু বাদ দিলে মুভিটা বেশ উপভোগ্য।
রেদওয়ানুল হোসেন