পারফেক্ট ডেজ: নি:সঙ্গতা যেখানে উপভোগ্য

একজন নি:সঙ্গ বয়স্ক লোক, প্রতিদিন একই কাজ করে যাচ্ছেন। ভোরে ওঠেন। চলে যান কাজে। টোকিও শহরের পাবলিক টয়লেটগুলো পরিস্কার করেন তিনি। নিজের কাজের প্রতি দারুণ মনোযোগ তার। অন্যরা ফাঁকিবাজি করলেও তিনি অত্যন্ত যত্ন নিয়ে কাজ করেন। ব্যক্তি জীবনেও তিনি বেশ গোছানো। তার ছোট্ট ঘরের সবকিছু গোছানো।

একই নিয়মে চলে তার প্রতিদিন। ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, কাজে যাওয়া, কাজ থেকে ফিরে গোসল করা, তারপর সাইকেল নিয়ে শহরে ঘোরাঘুরি, রাতে একই রেস্টুরেন্টে খান প্রতিদিন। তারপর বাসায় ফিরে ঘুম। পরদিন আবার একই নিয়মে চলতে থাকে।

এর মধ্যেই দেখা যায় তিনি ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনতে ভালোবাসেন, বই পড়তে ভালোবাসেন। তার গাড়ির ভেতর থাকা ক্যাসেট প্লেয়ার বাজিয়ে তিনি গান শোনেন। উইলিয়াম ফকনারের গল্প পড়েন। একটা বই পড়া হলে আরেকটা বই কিনে নিয়ে আসেন। আর তার একটা ফিল্ম ক্যামেরা আছে। সেটা সবসময় সাথে রাখেন। ছবি তোলার শখ রয়েছে তার। ছুটির দিনে ছবিগুলো ওয়াশ করতে দেন আর নতুন ফিল্ম নিয়ে আসেন। একই দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে।

এই নিয়ে তার ছোট্ট জীবন। তার অতীত জানা যায় না। শুধু কিছুটা আভাস পাওয়া যায় তখন তার ভাগ্নি কয়েকদিনের জন্য তার কাছে এসে থাকে।

দিন যায়, একইরকমভাবে জীবন কাটিয়ে দিতে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে, একঘেয়ে বোরিং মনে হলেও নিজেকে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায়, আমিই বা কি এক্সাইটিং জীবন যাপন করছি? আমিও তো সেই একই সময় উঠছি, একই ট্রেনে করে প্রতিদিন অফিস যাচ্ছি, অফিসে একই ধরণের কাজ করে যাচ্ছি, সন্ধ্যার ট্রেন ধরে বাসায় ফিরে আসছি।

আমাদের সবার জীবনই আসলে বোরিং। আমাদের সাথে হিরায়ামার পার্থক্য হচ্ছে তিনি অন্তত নিজের মত করে জীবনটাকে উপভোগ করেন। কাজের বাইরে বাকিটা সময় শুধুই তার নিজের জন্য। সিনেমা শেষে মনে হয় হিরায়ামা আসলে সুখী একজন মানুষ।

উইম ওয়েন্ডার্স পরিচালিত ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ফ্রাঞ্জ লুসটিগ। ছবির প্রত্যেকটা ফ্রেমই  একেকটা ফটোগ্রাফ। যেকোন ফ্রেমে পজ দেবেন, দেখবেন একটি ফটোগ্রাফ। শুধুমাত্র সিনেমাটোগ্রাফির জন্য ছবিটা দেখা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *