ইমতিয়াজ আলীর ছবির জীবন
জামশেদপুরের ছেলে ইমতিয়াজ আলী। হিন্দু কলেজের ছাত্র। বাবা-মা থাকতেন পাটনায়। ইমতিয়াজ আর তাঁর ভাই আরিফ থাকতেন জামশেদপুরে খালার বাসায়। খালার বাসার আশেপাশে তিনটা সিনেমা হল ছিল।
ইমতিয়াজ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হলগুলো বাসার এতই কাছে ছিল যে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়েও হলে সিনেমা চলার আওয়াজ পেতেন। বাসার পাশে হওয়ায় সিনেমা হলে ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত। সেখান থেকেই আগ্রহ জন্মে সিনেমার প্রতি। লেখাপড়া লাটে উঠেছিল। ফেল করার পরও বাবা ধমকাননি বরং উৎসাহ দিয়েছেন সব ব্যাপারে।
ইমতিয়াজ বলেন, ‘বাবার উৎসাহ পেয়েই পরে লেখাপড়াটা ভালোমত শুরু করি আর ভালোও করি’।
লেখাপড়া শেষ করে টিভির জন্য কাজ করা শুরু করলেন। জিটিভির জন্য বানালেন ‘কুরুক্ষেত্র’ আর স্টার প্লাসের জন্য ‘ইমতেহান’।
২০০৫ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘সোচা না থা’। এরকম ভালো রোমান্টিক কমেডি ছবি হিন্দিতে কমই আছে। তিন বছর লেগেছিল ইমতিয়াজের ছবিটা বানাতে। কিন্তু ব্যবসা করতে পারেনি ছবিটি। মূল চরিত্রে ছিলেন অভয় দেওল আর আয়েশা তাকিয়া।
দুই বছর পর বানালেন ‘জাব উই মেট’। কারিনা কাপুর তার জীবনের সেরা অভিনয়টা করেছেন এই ছবিতে। দ্বিতীয় ছবিই ইমতিয়াজকে বলিউডে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কাজ নিয়েও ভাবতে হয়নি। একে একে নির্মাণ করেন ‘লাভ আজকাল’, ‘রকস্টার’, ‘হাইওয়ে’, ‘তামাশা’।
লাভ আজকাল ছবির প্রচারনার জন্য একবার ভারতের কোন একটা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন ইমতিয়াজ। সবার খুব আগ্রহ পরিচালকের কথা শোনার জন্য। ইমতিয়াজ একটু লাজুক ধরণের লোক, কথাবার্তা কম বলেন। তাও ছবির প্রচারের জন্য মুখ তো চালাতেই হয়। এক ছাত্র জিজ্ঞেস করলো ছবি বানানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে।ইমতিয়াজের উত্তর ছিল অনেকটা এরকম, প্রথম প্রথম যখন কাজ শুরু করি অনেক কিছুই বুঝতাম না। ক্যামেরা পজিশন বুঝতাম না। ডিওপি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করতো, ক্যামেরা কোথায় বসাবে? আমি খুব গম্ভীরভাবে বলতাম, ‘তুমি ডিওপি। ক্যামেরা কোথায় বসাবে সেটা কি আমি বলবো? তাহলে তোমার দরকারটা কি?’ আমি আসলে তখন বুঝতাম না ক্যামেরা পজিশনিং জিনিসটা কি। ডিওপি ক্যামেরা-লাইট সেট করে আমার কাছে জানতে চাইতো, ‘স্যার ঠিক আছে?’ আমি খুব মনযোগ দিয়ে ক্যামেরায় চোখ রেখে বলতাম, ঠিক আছে। আসলে আমি কিছুই বুঝতাম না, কিন্তু সেটা ডিওপিকে বুঝতে দিলে কাজটা হয়তো ঠিকভাবে করতে পারতাম না। প্রথম কয়েকদিন এভাবেই করেছি, পরে শিখে গিয়েছি কাজ করতে করতে।