অস্কারে সেরা ছবির মনোনয়ন পেল ৮ ছবি

১. দ্য ফাদার

৮০ বছরের বৃদ্ধ অ্যান্থনি ডিমনেশিয়া রোগে আক্রান্ত। ধীরে ধীরে তার সব স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি তার মেয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন। তার মেয়ে তার দেখভাল করা শুরু করে। কিন্তু একটা সময় তিনি নিজের মেয়েকেও চিনতে পারেন না। স্মৃতিহীন জীবনে ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়েন অ্যান্থনি। আর তার মেয়ের জন্য শুরু হয় এক যুদ্ধ। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের অনবদ্য এক গল্প অসাধারণভাবে চিত্রিত করেছেন পরিচালক ফ্লোরিয়ান জেলার। ২০১২ সালের ফ্রেঞ্চ মঞ্চনাটক লে পিয়েরে অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। ছবিতে অ্যান্থনির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অ্যান্থনি হপকিন্স এবং তার মেয়ে অ্যানির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অলিভিয়া কোলম্যান। ৯৩তম অস্কারে ছবিটি ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেরা ছবি, সেরা অভিনেতা (অ্যান্থনি হপকিন্স) এবং সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (অলিভিয়া কোলম্যান)।

২. জুদাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মেসিয়াহ

কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৬৬ সালের আমেরিকার ওকল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টি। কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ববি সিল এবং হুয়ে পার্সি নিউটন প্রতিষ্ঠা করেন গ্রুপটি। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ছিল। আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টি সক্রিয়ভাবে কাজ করে।

ইলিনয় রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন ফ্রেড হ্যাম্পটন। তাঁকে হত্যা করার জন্য এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট রয় মিটশেল গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করে উইলিয়াম বি ও’নীলকে। গাড়ি চুরি করতে গিয়ে ‍মিটশেলের হাতে ধরা পড়ে ১৭ বছর বয়সী ও’নীল। এফবিআই এর সোর্স হিসেবে কাজ করার শর্তে সে মুক্তি পায়। ফ্রেড হ্যাম্পটনের সাথে দ্রুতই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে ও’নীল। এফবিআইকে হ্যাম্পটনের ফ্ল্যাটের ঠিকানা দেয় সে। রাতের খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পালিয়ে যায় ও’নীল। গভীর রাতে হ্যাম্পটনের ফ্ল্যাটে হামলা চালায় শিকাগো পুলিশ ও এফবিআই। ১৯৬৯ সালের সেই অভিযানে মারা যান হ্যাম্পটন। আসলে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

১৯৭৩ সালে ও’নীলের এফবিআই সোর্স হিসেবে কাজ করার খবরটি জানাজানি হয়। এরপর এফবিআই এর সহযোগিতায় নাম পরিচয় বদলে আত্মগোপনে চলে যায় ও’নীল।  ৪০ বছর বয়সে  বয়সে ও’নীল আত্মহত্যা করেন। ফ্রেড হ্যাম্পটন এবং ও’নীলকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। ছবিতে ফ্রেড হ্যাম্পটনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ড্যানিয়েল কালুইয়া। ও’নীলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন লেকিথ স্ট্যানফিল্ড এবং রয় মিটশেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জেসে প্লেমন্স। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শাকা কিং।

৩. ম্যাংক

পরিচালক ডেভিড ফিঞ্চারের বাবা জ্যাক ফিঞ্চার ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ১৯৯০ এর দশকে। এটি মূলত মার্কিন চিত্রনাট্যকার হারমান জে. ম্যাংকুইজ এর জীবনীভিত্তিক ছবি। ম্যাংকুইজ এবং অরসন ওয়েলস মিলে লিখেছিলেন ১৯৪১ সালে মুক্তি পাওয়া বিখ্যাত ছবি ‘সিটিজেন কেইন’ এর চিত্রনাট্য। এটি ছিল অরসন ওয়েলসের প্রথম ছবি। এই ছবির চিত্রনাট্য লেখার সময়ে ম্যাংকুইজের জীবনের নানা ঘটনাই দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। সিটিজেন কেইন এর চিত্রনাট্য লেখার সময় ম্যাংকুইজের পা ভাঙা ছিল। এক গাড়ি দূর্ঘটনায় তার পা ভাঙে। তাই তিনি বাড়িতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে ছিলেন। সে সময় তিনি বলতেন আর তার সহকারী রিতা আলেক্সান্ডার লিখতেন। ছবিতে ম্যাংকুইজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন গ্যারি ওল্ডম্যান। আর সেই সময়কার আবহ ধরে রাখতে ছবিটি সাদাকালো রাখা হয়েছে।

৪. মিনারি

১৯৮০ এর দশকের গল্প। আমেরিকায় অভিবাসী হওয়া কোরিয়ান এক পরিবারের গল্প। যারা তাদের ফেলে আসা অতীত ভুলে আমেরিকার এক গ্রামে নতুন জীবন গড়ে তুলতে চায়। সেই সংগ্রামমুখর জীবনের গল্প দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। ছবিটির পরিচালক লি আইজাক চাং। পরিচালকের জীবনের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এর চিত্রনাট্য লেখা। গত বছর সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। উৎসবে গ্র্যান্ড জুরি প্রাইজ এবং ড্রামাটিক অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড জেতে ছবিটি।

৫. নোম্যাডল্যান্ড

স্বাধীন বা ইনডিপেনডেন্ট সিনেমার ভালো একটি উদাহরণ ছবিটি। মহামন্দার কারণে নিজের ছোট্ট শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ষাটোর্ধ্ব এক বিধবা নারী। তার এই যাত্রার ঘটনাবলী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। নোম্যাড বলতে মূলত যাযাবরদের বোঝানো হয়ে থাকে। যাদের স্থায়ী কোন আবাসস্থল নেই। তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ঘুরে বেড়ায়। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড। তিনি ছবিটির সহপ্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন। ছবিটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চীনা নির্মাতা ক্লোয়ি জাও। ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা, সম্পদনা এবং সহ প্রযোজনার কাজটিও করেছেন তিনি। জেসিকা ব্রুডারের লেখা ‘নোম্যাডল্যান্ড: সারভাইভিং আমেরিকা ইন দ্যা টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে। ২০১৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রথম দেখানো হয়। উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ডেন লায়ন জেতে ছবিটি। পরবর্তীতে টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড জেতে ছবিটি।

৬. প্রমিজিং ইয়াং ওম্যান

৩০ বছর বয়সী ক্যাসি মেডিকেল স্কুল ড্রপআউট। তার বন্ধু নিনা তারই এক সহপাঠী আল মনরোর দ্বারা ধর্ষিত হয়। তবে প্রমানের অভাবে সেই ঘটনা অমীমাংসিত থেকে যায়। এমনকি সহপাঠী এবং শিক্ষকদের অনেকেই মনে করে নিনা ধর্ষণের শিকার হয়নি। কিন্তু ক্যাসি বিশ্বাস করে নিনা ধর্ষিত হয়েছিল। আর তা থেকে মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতে থাকে সে। একসময় মেডিকেলের পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ক্যাসি। আর এমন সময়ে সে খবর পায় মনরো বিয়ে করতে যাচ্ছে। মনরোর বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় সে। কথা বলে বন্ধু, সহপাঠী এবং মনরোর সাথেও। মনরোর বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে শুরু করে ক্যাসি। কিন্তু সে কি পারবে মনরোকে অপরাধী প্রমান করতে? এদিকে এগিয়ে আসছে মনরোর বিয়ের দিন।  

পরিচালক এমারেল্ড ফেনিল এর প্রথম ছবি এটি। ৯৩তম অস্কারে পাঁচটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ছবিটি। যার মধ্যে রয়েছে সেরা ছবি, সেরা পরিচালক এবং সেরা অভিনেত্রী। ছবিটির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ক্যারি মুলিগান।

৭. সাউন্ড অব মেটাল

অস্কারে ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ছবিটি। সেরা ছবি, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য, সেরা অভিনেতা, সেরা পার্শ্ব অভিনেতা, সেরা সম্পাদনা এবং সেরা শব্দ বিভাগে। পরিচালক হিসেবে দারিশ মারদার এর প্রথম ছবি এটি। একজন হেভি মেটাল ড্রামার তার শ্রবণশক্তি ক্রমে হারিয়ে ফেলছেন। আর তার জন্য শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলা মানে সবকিছু হারিয়ে ফেলা। একদিকে ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন আর অন্যদিকে অবশিষ্ট শ্রবণশক্তিকে ধরে রাখার লড়াই নিয়ে গল্প, জীবনের গল্প, বেঁচে থাকার গল্প। ছবিতে ড্রামারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেতা রিজ আহমেদ।

৮. দ্য ট্রায়াল অব শিকাগো সেভেন

পরিচালক অ্যারন সরকিন এর আগে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। বিশেষ করে সত্য ঘটনা অবলম্বনে বা জীবনীমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে এনিমি অব দ্য স্টেট (১৯৯৮), দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক (২০১০), স্টিব জবস (২০১৫)। ২০২০ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘দ্য ট্রায়াল অব শিকাগো সেভেন’। ষাটের দশকে আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করা শিকাগো সেভেন নামের একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে চলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার বিচার নিয়ে এই ছবির কাহিনী। এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না। বিশেষ করে বিচারক জুলিয়াস হফম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সরকারের পক্ষপাতিত্ব করার। আদালতের কামরায় যুক্তি পাল্টা যুক্তির মধ্যে দিয়ে আমেরিকার রাজনীতি, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিন সরকারের নীতি এসব বিষয় উঠে এসেছে। ছবিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইয়াহিয়া আব্দুল-মতিন দ্বিতীয়, সাচা ব্যারন কোহেন, ড্যানিয়েল ফ্ল্যাহার্টি, জোসেফ গর্ডন লেভিট, মাইকেল কিটন, ফ্র্যাংক ল্যাঙ্গেলা, জন ক্যারল লিঞ্চ, এডি রেডমেইন, নোয়া রবিন্স, মার্ক রাইল্যান্স, অ্যালেক্স শার্প, জেরেমি স্ট্রং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *