আটকে থাকা ছবিগুলো কবে মুক্তি পাবে?

যেকোনো দেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে এর চলচ্চিত্র। শুধুমাত্র দেশে নয়, বিদেশেও দেশের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্র। তাই চলচ্চিত্রে কোনো রকমের খড়্গ কাম্য নয়। তবে বাংলাদেশে নানা সময়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কখনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, কখনোবা আইনীর মারপ্যাচে ফেলে ছবি মুক্তি বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ফলে অনেকগুলে ছবি রয়েছে যা নির্মিত হলেও দর্শকরা তা দেখার সুযোগ পাননি।

এরকমই একটি ছবি শনিবার বিকেল ছবিটি নিয়ে জটিলতা কম হয়নি। দফায় দফায় ছবিটির মুক্তি আটকে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ছবির নির্মাতার আফসোসও কম নয়। তিনি বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে সরব হয়েছিলেন। সরব হওয়াটাই স্বাভাবিক। একটি চলচ্চিত্রের পেছনে নির্মাতা, লেখক, কলাকুশলীদের নিবিড় শ্রম থাকে। সেই শ্রম তখনই স্বার্থক হয় যখন তা দর্শকদের কাছে পৌঁছায়। তাই যে কোন ছবিকে দর্শকের কাছে পৌঁছানোর স্বাধীনতাটুকু দিতে হবে।

বর্তমানে শনিবার বিকেল ছবির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তার কাছে আমাদের দর্শকদের প্রত্যাশাও বেশি। যেহেতু তিনি নিজেই এ ধরণের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তাই আমরা আশাবাদী তিনি আটকে থাকা ছবিগুলো মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।

বাংলাদেশে এর আগেও ছবি আটকে দেয়ার ইতিহাস রয়েছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পাওয়া তারেক মাসুদ পরিচালিত মাটির ময়না সরকারি চাপে আটকে ছিল অনেকদিন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার পর ছবিটি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয় এবং দর্শকদের আগ্রহের কারণে একসময় তা দেশে মুক্তি পায়। ফলে দর্শকদের ছবিটি দেখার সুযোগ হয়।

তবে সেন্সরে নানা কারণে ছবি আটকের দেয়ার ঘটনা থেমে ছিল না। এখনও অনেকগুলো ছবি সেন্সরের নিষেধাজ্ঞার কারণে দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এখনও অনেক ছবির ভাগ্য অনিশ্চিত। এসব ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো, শনিবার বিকেল, রানা প্লাজা, মর থেংগারি (মাই বাইসাইকেল), নমুনা, কাঠগোলাপ, মনোলোক, অমীমাংসিত, অন্যদিন, মেকআপ।

এসব ছবিগুলো নানা কারণে মুক্তি পায়নি। কখনো সরকারি চাপে, কখনো বিভিন্ন রকমের আইনী জটিলতায়। যেমন: রানা প্লাজা ধ্বসের মর্মান্তিক ঘটনা অবলম্বনে রানা প্লাজা ছবিটি নির্মাণ করা হয়। প্রথমে সেন্সরের আপত্তিতে ছবিটি কাটছাট করা হয়। তারপর হাইকোর্টের নির্দেশে ছবিটি মুক্তির ব্যবস্থা হলেও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ছবিটির মুক্তি আবার আটকে যায়। ছবিটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে নানা সময়ে বলা হয়েছে।

নমুনা নামের ছবিটি নির্মিত হয়েছিল সরকারি অনুদানে। তারপরও ছবিটির গল্পে আপত্তি জানিয়ে ছবিটি মুক্তির পথ আটকে দেয়া হয়। বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবিটি নিয়ে অভিযোগ ছিল, অনুদানের সময় যে গল্প জমা দেয়া হয়েছিল তা পরিবর্তন করে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে।

অমীমাংসিত ছবিটি নিয়ে প্রচারণা আছে দেশব্যাপী আলোচিত একটি ডাবল মার্ডার খুনের ঘটনার কাহিনী অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। আসলেই তা কি না সেটা জানার বা দেখার সুযোগ দর্শকদের হয়নি। কারণ ছবিটির মুক্তি আটকে দেয়া হয়েছে।

বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মাণ করা হয়েছে শনিবার বিকেল ছবিটি। এটিও দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। দেশে মুক্তি না পেলেও ভারতের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবিটি মুক্তি পায়। তবে নিজের দেশেই ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি।

ছবিগুলো আটকে থাকা মোটেই দেশের সংস্কৃতির জন্য শুভ কোনো লক্ষণ নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম মূল শক্তি। যেকোনো মতই প্রকাশ করতে দিতে হবে। তারপর আপনি সেটার পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলতে পারেন। ভালো কাজের যেমন প্রশংসা করতে হয় তেমনই খারাপ কাজের সমালোচনা করতে হবে।

তাই দেশের কল্যাণের জন্যই আটকে থাকা ছবিগুলো মুক্তি দিতে হবে। আশা করি বর্তমান সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

ফাহিম ইবনে সারওয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *