থালাইভি (২০২১)
থালাইভি মানে নেত্রী। তামিলনাড়ুর পাঁচবারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জয়ললিতা। সাধারণ মানুষের কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন ‘আম্মা’ নামে। প্রথম জীবনে ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নায়িকা।
চলচ্চিত্রে তাঁর শুরু এবং উত্থানের নেপথ্যে ছিল জনপ্রিয় সুপারস্টার এমজিআর এর সহযোগিতা। এমজিআর আর জয়ললিতার জুটি ছিল সুপার ডুপার হিট। এক সময় প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দুজন। কিন্তু কখনোই এই সম্পর্ক কোন আনুষ্ঠানিক রুপ পায়নি। তবে এমজিআর এর পাশে সবসময়ই ছায়ার মত ছিলেন জয়ললিতা। তাঁর হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন তিনি। এমজিআর এর পাশ থেকে জয়ললিতাকে সরাতে কম ষড়যন্ত্র হয়নি। সবকিছুর পরেও তাঁদের দুজনের জুটি ছিল অটুট। দুজন দূরে সরে গেছেন, আবার এক হয়েছেন।
জয়ললিতা সবসময় মানুষের মনে রাজত্ব করেছেন সেটা বড় পর্দা হোক কিংবা রাজনীতির মঞ্চ। সুন্দরী, জেদি, বুদ্ধিমতী জয়ললিতা সব বাধা ঠেলে এগিয়ে গিয়েছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে। সেই জয়ললিতার বায়োপিক ‘থালাইভি’।আড়াই ঘণ্টার ছবিতে জয়ললিতার ঘটনাবহুল জীবনকে তুলে ধরা কঠিনই বটে। তবে এই ছবিতে প্রায় সবকিছুই তুলে আনা হয়েছে। সেদিক থেকে ডিরেক্টর বিজয় সফল।
মূল ভূমিকায় কঙ্গনার জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং ক্যারেক্টার ছিল তেমনি এমজিআর এর ক্যারেক্টার ফুটিয়ে তোলা কঠিন ছিল অভিনেতা অরবিন্দ সোয়ামির জন্যও। দুইজনই ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন। একদম পাওয়ার প্যাকড। বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল অরবিন্দের জন্য। অভিনয়ের জগতে খুব একটা পরিচিত মুখ নন তিনি। প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছেন এই অভিনেতা।
এই দুজনের অভিনয়ের পাশাপাশি বলতে হয় ছবির প্রোডাকশন ডিজাইনের কথা। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা এই ছবিতে দেখানো হয়েছে। পুরোনো দিনের এসব ঘটনা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। বিশেষ করে বড় ধরণের জনসভার দৃশ্যগুলো। সব কাজই নিখুঁত প্রোডাকশন ডিজাইনের কারণে সুন্দরভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে জয়ললিতা এবং এমজিআর এর ছবির শুটিংয়ের সেটগুলো দারুণভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এমজিআর এর শেষ বিদায়ের দৃশ্যটিও অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর আসে কাস্টিং এবং মেকআপ। বিভিন্ন বয়সে জয়ললিতার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে কঙ্গনাকে বারবার রুপ পরিবর্তন করতে হয়েছে। সেটা সম্ভব হয়েছে মেকআপ আর্টিস্টের পারদর্শীতায়। পাশাপাশি এমজিআর, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীর মত ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকেও মানানসইভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সবশেষ বলতে হয় ভিএফএক্স এর কথা। ভিএফএক্স ছাড়া এই ছবির অনেক দৃশ্যই বিশ্বাসযোগ্য করে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হতো না।
দুর্দান্ত টিমওয়ার্ক, পর্যাপ্ত রিসার্চ এবং নিখুঁত পরিকল্পনা করে ছবির কাজ করা। তাই ছবিটি দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি তবে কঙ্গনার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি হয়ে থাকবে থালাইভি।