দ্যা টার্মিনাল (২০০৪)
ভিক্টর নভরোস্কি জন.এফ কেনেডি বিমানবন্দরে এসে আটকে গেলেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যস্ত এবং অত্যাধুনিক বিমানবন্দর এটি। প্রতি সেকেন্ডে বিভিন্ন দেশের মানুষ আসছে আর যাচ্ছে। এতো সব দেশের ভিড়ে নভরোস্কি একজন দেশহীন মানুষ। সেটা তিনি জানতে পারেন যখন বিমানবন্দরে তার পাসপোর্টটি অচল হয়ে যায়।
যে দেশ নেই সে দেশের পাসপোর্ট কিভাবে কাজ করবে? নভরোস্কি ইংরেজি জানেন না। তার দেশের নাম ক্রাকোজিয়া। তিনি যখন আকাশে উড়ছিলেন, সে সময়টায় তার দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আর সে কারণেই আমেরিকা আর ক্রাকোজিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। এইসব কিছু যখন ঘটছে তখন নভোরস্কি হয়তো তৃতীয় কোনো দেশের আকাশসীমায় ছিলেন। আকাশ থেকে নামতে নামতে একটা মানুষ দেশহীন হয়ে গেলেন। যেহেতু নভোরস্কি ইংরেজি জানেন না ব্যাপারটা তাকে বুঝতে হয় টিভির ছবি দেখে। তার দেশে যুদ্ধ চলছে।
বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষের কোনো যুক্তিই তিনি বোঝেন না। তবে তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারেন না। কাঁচের ওপাশে নিউইয়র্কের খোলা রাস্তা তার জন্য নয়। নভোরস্কি বিমানবন্দরেই পড়ে থাকেন। সেখানেই নিজস্ব আবাস গড়ে তোলেন। কিন্তু এভাবে তাকে রাখতে গেলে বিপদটা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। নভোরস্কির মতো উটকো ঝামেলা বিদায় দিতে চান তারা। খুলে দেন দরজা, নভোরস্কির সুযোগ আসে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার। নভোরস্কি বাইরে বেরোন না। কারণ এইভাবে বের হলে তিনি ফেরারি হবেন। যার দেশ নেই তার কোনো পরিচয় নেই বাইরের পৃথিবীতে।
নভোরস্কি এয়ারপোর্টেই থাকেন। সেখানেই কাজের ব্যবস্থা করে নেন। যাত্রীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যে ডলার পান সেটাতে তার চলে যায়। বিমানবন্দরের ভেতরে কিছু বন্ধুবান্ধবও জুটে যায় তার। ইংরেজিও অল্পবিস্তর শিখে ফেলেন। এরপর কিছু সিনেম্যাটিক এলিমেন্ট যেমন প্রেম এবং প্রেমিকার কাঁধে বন্দুক রেখে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নভোরস্কিকে বের করার চেষ্টা।
দ্যা টার্মিনাল সিনেমাটিতে নভোরস্কি বিমানবন্দর থেকে বের হতে পেরেছিলেন। ক্রাকোজিয়ার গৃহযুদ্ধ থেমে গিয়েছিলো।
ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে ইরানি উদ্বাস্তু মেহেরান কারিমি নাসেরির জীবনের ঘটনা অবলম্বনে। প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে তিনি থেকেছেন একটানা ১৮ বছর। ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তার আত্মজীবনী ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ অবলম্বনে স্টিভেন স্পিলবার্গ ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ‘দ্য টার্মিনাল’ ছবিটি। টম হ্যাংকস এবং ক্যাথরিন জেটা জোন্স মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন এতে।
ছবিটি আপনাকে রুঢ় বাস্তবের মুখোমুখি করে দেবে। পশ্চিমা বিশ্বের বাইরের একজন নাগরিক হিসেবে আসলেই যে আপনার, আমার নাগরিকত্ব সবসময় হুমকির মুখে রয়েছে। কে যানে সুদানের কোন অংশে পড়বেন আপনি কিংবা সিরিয়া শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা! ফিলিস্তিন কি ভবিষ্যতে পুরোটাই ইসরাইলের পেটে ঢুকে যাবে কি না! কে জানে! আমাদের জন্য পুরো পৃথিবীটাই একটা টার্মিনাল!