স্পটলাইট (২০১৫)
প্রথমেই বলতে হবে এই ছবির কাস্টিং! এই রকম কাস্ট সামলানো বিশাল ব্যপার! মার্ক রুফালো, মাইকেল কিটন, র্যাচাল অ্যাডামস, লিয়েভ শ্রেয়বার, জন স্ল্যাটেরি, স্ট্যানলি তুসি এবং ব্রায়ান ডি’আর্কি জেমস!
‘স্পটলাইট’ ছবিটা কয়েকটা কারণে আগ্রহ তৈরি করে। প্রথমত, ছবিটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। দ্বিতীয়ত, ছবিটা একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ঘটনা নিয়ে নির্মিত। তৃতীয়ত, অনুসন্ধানী ঘটনাটি ছিল ৩০ বছর ধরে যাজকদের দ্বারা ক্রমাগত শিশুদের যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে। আর সব জেনেশুনেও নীরব ছিল চার্চের সঙ্গে জড়িত যাজকরা।
সবকিছু মিলিয়ে ছবিটা একটা বোমা! সত্যিকার ঘটনা যেভাবে বোমার মত ফেটেছিল, ছবিটাও সেভাবেই ফেটেছে। ৮৮তম অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে ছবিটি। আরও পেয়েছে সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার। ছবির পরিচালক টম ম্যাকার্থি। চিত্রনাট্য লিখেছেন টম আর জোশ সিঙ্গার দুজনে মিলে।
স্টোরি মোটামুটি প্রেডিক্টেবল। সেটাকে উপভোগ্য ও উত্তেজনাময় করে তুলেছে অভিনয়। একটা স্টোরি ব্রেক করার জন্য রিপোর্টার আর এডিটররা যে কি রকম পাগলের মত কাজ করেন সেটা দারুনভাবে অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন ছবির অভিনেতা অভিনেত্রীরা। একদম মাপা অভিনয় করেছেন সবাই। কখনোই অতি অভিনয় মনে হয়নি আবার ছেড়েও দেননি কখনো। কিছু কিছু স্টোরি থাকে যা সাংবাদিকের ভেতরের মানুষটাকে বেশি নাড়া দেয়। এই স্টোরিটাও তেমন।
স্পটলাইট মূলত ‘বোস্টন গ্লোব’ পত্রিকার একটি অনুসন্ধানী দল। চারজন সাংবাদিক নিয়ে গড়া এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াল্টার রবিনসন। ছবিতে অনুসন্ধানের দীর্ঘ প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে, একটা স্টোরি করতে কি পরিমান গবেষণা করতে হয় সেই খাটনিটাও দেখানো হয়েছে, সেখানে দ্রুত স্টোরি ব্রেক করার চাপ ছিল, কারণ প্রতিপক্ষ ‘বোস্টন হেরাল্ড’ পত্রিকা যদি আগে স্টোরিটা ব্রেক করে তাহলে স্পটলাইট টিমের সব কষ্টই বৃথা।
কিন্তু সম্পাদক রবিনসন যত স্টোরির গভীরে ঢুকছিলেন, বুঝতে পারছিলেন এর গভীরতা আরও ব্যাপক। আর সে সময়ে তাঁর দেয়া ডায়লগ, ‘I wanna keep digging’, আমি আরও গভীরে যেতে চাই!
সাংবাদিকতা এটাই, কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের করা। ২০০২ সালে বোস্টন গ্লোবের স্পটলাইটে ছাপা হয়েছিল শিশুদের উপর যাজকদের যৌন নির্যাতনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। বোস্টন তো বোস্টন পুরো আমেরিকা নড়ে গিয়েছিল ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর। ২০০৩ সালে ওই প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার দেয়া হয়েছিল স্পটলাইট টিমকে। ১২৯ মিনিটের ‘স্পটলাইট’ ছবিটি ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভ্যানিস চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর।