হাসিন দিলরুবা (২০২১)

ছবিটা শুরু হচ্ছে ছোট শহরের এক বাড়িতে বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে। বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া যায় একটি কাটা কব্জি। কব্জিটি রিশুর। আর যে মৃতদেহ দেখে পুলিশের ধারণা বিস্ফোরণে নয় মাথায় ভারি কিছুর আঘাতে মুত্যু হয়েছে ভদ্রলোকের।

মৃত্যু দিয়ে শুরু হলেও ছবির ভেতরে আছে প্রেম, গভীর প্রেম। রোমান্টিক মিস্ট্রি থ্রিলার ধাঁচের ছবিটি পরিচালনা করেছেন ভিনিল ম্যাথিউ। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হাসি তো ফাসি’ ছবির পরিচালকও তিনি। পরিণীতি চোপড়া এবং সিদ্ধার্থ মালহোত্রা অভিনীত ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।

ছবির গল্প নতুন কিছু নয়। তবে গল্পটাকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করায় এবং কিছুক্ষণ পর পর গল্প নতুন মোড় নেয়ায় ছবিটা দর্শকদের ধরে রাখতে পেরেছে। গল্পের সাথে সাথে ছবির মুডও বদলেছে। প্রথম দিকে দেখে মনে হবে ছিমছাম মিষ্টি প্রেমের গল্প। ঘরের ভেতর বউ-শাশুড়ির বাকবিতণ্ডা দেখে মনে হবে রোমান্টিক কমেডি।

তবে তারপরই ঘটনা পাল্টাতে শুরু করে, ছবিটি হয়ে ওঠে মিস্ট্রি থ্রিলার। একজন খুন হয়েছেন। তারপর তাকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে গ্যাস বিস্ফোরণের মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা খুন হওয়া ব্যক্তিটি রিশু এবং খুনী হলেন তার স্ত্রী রানী।

এমন ধারণার পেছনে বিস্তর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। রিশুর খালাতো ভাই নীলের সাথে পরকীয়া ছিল রানীর। রিশুকে ফেলে পালানোরও প্ল্যান ছিলো। কিন্তু নীল ধোঁকা দেয়ায় সেটা হয়নি। সেই ক্ষোভ থেকে আপাত নিরীহ রিশু পর্যন্ত খুন করতে গিয়েছিল নীলকে।

প্রেমিকের মধ্যে যে খুনী বাস করে সেটা রিশুকে দেখেই টেন পান রানী। বেশ কয়েকবার রানীকে দুর্ঘটনায় ফেলে মারার চেষ্টা করেন। অবশ্য একেবারে মেরে ফেলার চেয়ে যন্ত্রণা দেয়াটাই বোধ হয় বেশি আনন্দদায়ক ছিলো রিশুর জন্য।

সব ঘটনা বিশ্লেষণ করে তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত, রানীই খুন করেছেন তার স্বামীকে। কিন্তু প্রমাণ কই? কোনভাবেই প্রমাণ করা যাচ্ছে না যে রানী খুনী। আর তাই রানী মুক্তি পান।

কিন্তু গল্পের জট তো খোলে না। কীভাবে খুন হলো? কে করলো খুনটা?

শেষমেশ গল্পটা মিলিয়ে দিয়েছেন চিত্রনাট্যকার কনিকা ঢিলন। তবে সহজ সরল গল্পটা শেষ হয়েছে অতি নাটকীয়তায়। তাই ছবিটা কিছুটা মার খেয়েছে। কনিকা ঢিলন এর আগে ‘রা.ওয়ান’, ‘কেদারনাথ’, ‘মনমরজিয়া’-এর মত ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন। এ গল্পটাও ভালোই লিখেছিলেন। কিন্তু শেষটায় গিয়ে সর্বনাশ করে ফেলেছেন।

ছবির গানগুলো বেশ শ্রুতিমধুর। অমিত ত্রিভেদী হতাশ করেননি। বিশেষ করে ‘ফিসাল যা তু’ গানটার কথা বলতেই হয়।  

হর্ষবর্ধন রানেকে অনেকদিন পর পর্দায় দেখা গেল। ‘সানাম তেরি কসম’ এর পর ‘তাইশ’-ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাকে। তামিল ছবিতে নিয়মিত হলেও হিন্দি ছবিতে তাকে সচরাচর দেখা যায় না। ভিক্রান্ত মেসি ওয়েব জগতে বেশ জনপ্রিয়। নিজের চরিত্রে চমৎকার। তবে তাদের দুজনের তুলনায় তাপসী পান্নু অনেক বেশি জনপ্রিয় বা পরিচিত আমজনতার কাছে। তিনি গড়পড়তা অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে ভালো করেছেন রিশুর মা লতার চরিত্রে অভিনয় করা যামিনী দাস। এই ছবির যতটুকু ভালো লাগা সেটা যামিনী দাসই তৈরি করেছেন।

ছবি দেখে বোর হবেন না। শেষে একটু হতাশ হতে পারেন। ওয়ান টাইম ছবি। দ্বিতীয়বার আর দেখার ইচ্ছা হবে না। গানগুলো অবশ্য বারবার শুনতে ভালোই লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *