আর্জেন্টিনা ১৯৮৫ (২০২২)
আর্জেন্টিনা নামটা মাথায় আসলেই ফুটবলের কথা মনে পড়ে। ম্যারাডোনা কিংবা মেসির কথা মনে পড়ে। ফুটবলের পাশাপাশি আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ ঘটনাবহুল।
১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে নির্বাচিত সরকারকে এক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলে সামরিক একনায়কতন্ত্র।
এই সময়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবাদ হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে। সবগুলো আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করা হয়। নিপীড়ণ, নির্যাতন, গুম, খুন, ধর্ষণ এমন কোনো অপরাধ নেই যা সামরিক বাহিনী সেই সময়ে করেনি।
দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর আবার গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর বিচার শুরু হয় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের। কিন্তু তখনও সামরিক বাহিনীর দাপট ছিল। কিছু কিছু মানুষ তখনও সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করছিল।
সে কারণে কোনো আইনজীবীই সাহস করে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে যেতে চাচ্ছিলেন না। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার পাশাপাশি সাক্ষী খুঁজে পাওয়াটাও ছিল দুরুহ ব্যাপার।
তবে সব ভয়কে উপেক্ষা করে মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নেন দেশটির তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর জুলিয়া সিজার স্ট্র্যাসেরা। পরিবারের কথা ভেবে তিনি দোটানায় ছিলেন কিছুটা কিন্তু তার পরিবারই তাকে সবচেয়ে বেশি সাহস জোগায় মামলা লড়ার জন্য।
তারপর এক অবিশ্বাস্য কাহিনী ধীরে ধীরে দর্শকদের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে। স্ট্র্যাসেরা এবং তার দল কীভাবে শত প্রতিকূলতা জয় করে সত্যকে মানুষের সামনে নিয়ে আসেন তা এক দেখার মত বিষয়। কোর্টরুম ড্রামা হলেও সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়ণকে অনেকটা বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরা হয়েছে ছবিটিতে।
বিশেষ করে ভূক্তভোগীদের আদালতে দেয়া জবানবন্দী যে কোনো সংবেদনশীল মানুষকেই বিপর্যস্ত করে তুলবে। ছবিটিতে ভুক্তভোগীদের দেয়া জবানবন্দীর সত্যিকারের ফুটেজও ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবিটি ৭৯তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপেরেস্কি পুরস্কার জিতেছিল। এছাড়া গ্লোডেন গ্লোব এবং অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল ছবিটি।