ফিল্মমেকারদের জন্য জিম জারমুশের পাঁচ পরামর্শ

মুক্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা বা ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার হিসেবে যে কজন চলচ্চিত্র নির্মাতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিখ্যাত তাঁদের মধ্যে জিম জারমুশ অন্যতম। মার্কিন নির্মাতা জারমুশের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ডেড ম্যান’, ‘ঘোস্ট ডগ : দ্য ওয়ে অব দ্য সামুরাই’, ‘কফি অ্যান্ড সিগারেটস’, ‘ব্রোকেন ফ্লাওয়ার্স’, ‘দ্য লিমিটস অব কন্ট্রোল’।

২০০৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছিলেন জিম জারমুশ।

এক

চলচ্চিত্র নির্মাণের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। পৃথিবীতে যত ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাতা আছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের তত ধরণের নিয়ম আছে। এটা একটা খোলা মাধ্যম। যাই হোক, আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো মনে করি না কি করতে হবে সেটা আমি কাউকে বলে দেব। এটা আমার কাছে অনেকটা কাউকে তার ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে বলা, বা ধর্ম ঠিক করে দেয়ার মত। এটা আমার ব্যক্তিগত দর্শন বিরোধী। সবারই নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। কেউ যদি আপনাকে বলে, সে যেভাবে করেছে, সেটাই একমাত্র উপায় তাহলে তার থেকে শারিরীক ও মানসিক দুভাবেই দূরে সরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

দুই

কারো কথায় বেশি গুরুত্ব দেবেন না। হয় মানুষ আপনাকে সাহায্য করবে, নয়তো করবে না, কিন্তু তারা আপনাকে থামাতে পারবে না। যারা চলচ্চিত্রে পয়সা ঢালে, চলচ্চিত্র পরিবেশন করে, প্রদর্শন করে তারা কেউ চলচ্চিত্র নির্মাতা না। তারা কখনোই তাদের কাজে নির্মাতাদের নাক গলাতে দেবে না আর তাই নির্মাতাদেরও উচিত চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে তাদেরকে নাক গলাতে না দেয়া। দরকার হলে সাথে বন্দুক রাখতে হবে। এবং দয়া করে পরগাছা স্বভাব পরিহার করুন। আপনারা আশেপাশেই সবসময়ই এমন লোকজন থাকবে যারা বড়লোক হওয়ার জন্য বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। তারা আসলে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ততটুকুই জানে, যতটুকু জর্জ বুশ হাতাহাতির কৌশল সম্পর্কে জানে।

তিন

চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রোডাকশন ডিজাইন করা হয়, প্রোডাকশন ডিজাইনের কথা ভেবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় না। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে দুনিয়াব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া এখনো পিছিয়ে রয়েছে। বাজেট, সিডিউল এরকম নানারকম ঝামেলার মাধ্যমে সিনেমা নির্মাণের প্রক্রিয়াকে সংকুচিত বা বাধাগ্রস্ত করা হয়। যেসব চলচ্চিত্র নির্মাতা এসব বিষয়গুলো বোঝেন না তাদেরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করা উচিত, আকাশ কেন তোমার পায়ের নিচে?

চার

চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি সমণ্বয়মূলক কাজ। আপনি এমন সব মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান যাদের চিন্তাভাবনা হয়তো আপনার চেয়েও উন্নত। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, তারা নিজেদের কাজটাই করছে এবং অন্যকে বিরক্ত করছে না। নাহলে আপনি সব গুলিয়ে ফেলবেন। আবার সবাইকেই সমানভাবে দেখতে হবে এবং সম্মান করতে হবে। একজন প্রোডাকশন সহকারী যে কিনা ভিড় ঠেকানোর কাজ করছে, সেও কিন্তু অভিনেতা, চিত্রগ্রাহক, প্রোডাকশন ডিজাইনার বা পরিচালকের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। নাক উঁচু লোকজন নিয়ে কাজ করা সমস্যা। তাই আপনাকে সাবধানে আপনার দলের লোক ঠিক করতে হবে। তাহলে আপনার চলচ্চিত্রটি আপনার ভাবনার চেয়েও উন্নত মানের হবে। আপনি যদি একা একা কাজ করতে চান তাহলে ছবি আঁকা বা বই লেখা আপনার জন্য ভালো হবে। আর আপনি যদি স্বৈরাচার হতে চান তাহলে আপনার রাজনীতি করা উচিত।

পাঁচ

কোন কিছুই মৌলিক না। যে কোন জায়গা থেকেই আপনি চুরি করতে পারেন, যেটা আপনাকে উৎসাহ দেয় বা আপনার কল্পনাশক্তিকে প্ররোচিত করে। পুরোনো সিনেমা, নতুন সিনেমা, গান, চিত্রকলা, ফটোগ্রাফ, কবিতা, স্বপ্ন, আড্ডা, স্থাপত্য, সেতু, রাস্তার সংকেত, গাছ, মেঘ, স্রোত, আলো-আঁধার। সেসব জায়গা থেকেই চুরি করুন যেগুলো সরাসরি আপনার আত্মার সঙ্গে কথা বলে। আপনি যদি এটা করেন তাহলে আপনার কাজ (এবং চুরি) হবে খাঁটি। সততা অমূল্য, মৌলিকত্ব নামমাত্র। এবং আপনার এই চুরিবিদ্যা লুকিয়ে রাখার কিছু নেই, বরং নিজের মত করে সেটা প্রচার করুন। সবসময় জঁ ল্যুক গদার এর কথা মনে রাখবেন, ‘কোথা থেকে নেয়া হলো সেটা কোন ব্যাপার না, ব্যাপার হচ্ছে জিনিসটাকে কোথায় নেয়া হল’।

সূত্র: মুভি মেকার ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *