কাফকার সাথে এক সন্ধ্যায়

অফিস ফেরত সব সন্ধ্যাই মোটামুটি একরকম। বাসের জন্য ছোটাছুটি, ভীষণ জ্যাম পেরিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা। অথচ এরকম এক নিয়মিত সন্ধ্যায় হঠাৎ যদি দেখা হয় গ্রেগর সামসার সাথে। যে কিনা আমাদের মতই একজন ছাপোষা কেরানি। পরিবারের দায়িত্ব আর অফিসের ক্যাশ কালেকশনের ভার যার কাঁধে। আর সে কারণে যে নিজের ছুটির দিনটা উপভোগ করতে পারে না। ঘরের কোণেই কাটিয়ে দেয়।

সেই গ্রেগর সামসা যে কিনা একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, সে আর মানুষ নেই, পরিণত হয়েছে অজানা এক কীটে। পরিবারের মানুষেরা তার কাছে আসতে চায় না, ভয় পায়। পাঁচ বছরে একদিনও ছুটি না নেয়া সামসা অফিসে না যাওয়ায় তাকে খুঁজতে বাড়িতে চলে আসেন অফিসের হেড ক্লার্ক।

এ সবই গল্প। তবে কোনো না কোনোভাবে মিলে যায় আমাদের সবার জীবনের সাথে। যে কারণে ফ্রানৎস কাফকা আজও প্রাসঙ্গিক। কাফকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নভেলা ‘মেটামরফোসিস’। ১৯১৫ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

এই নভেলাটি নিয়েই গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় ‘রিডিং রুম’ নামে একটি রিডিং সেশন আয়োজন করেছিল গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড। এতে মূল আলোচক ছিলেন রাবিতা রহমান। ঘণ্টা তিনেকের এই রিডিং সেশনে নভেলাটি পাঠ এবং আলোচনার পাশাপাশি উঠে আসে শিল্প, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের নানা বিষয়।

মেটামরফোসিস নিয়ে আলোচনা মানে তো শুধু এক জায়গায় আটকে থাকা নয় তাই প্রসঙ্গতই আসে আলবেয়ার কামুর ‘দ্য আউটসাইডার’ এর কথা। সালমান রুশদির ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’, জ্যঁ পল সাত্রের ‘নজিয়া’ উপন্যাসের আলাপ। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দ্য স্নোস অব কিলিমাঞ্জারো’, জেমস জয়েসের উপন্যাস ‘আ পোট্রেইট অব দ্য আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়াং ম্যান’ এর কথা, হারুকি মুরাকামির ছোটগল্প ‘বার্ন বার্নিং’ এবং এটি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বার্নিং’ এর কথা। চলে আসে অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘হাউল’ কবিতার কথা।

সব মিলিয়ে সেশনটি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। বিশেষ করে আলোচকের বিস্তারিত আলোচনা এবং মেটামরফোসিস এর গল্প ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে আসা সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও চলচ্চিত্রের আলাপ, শ্রোতাদের নভেলাটি বুঝতে সাহায্য করে।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে খুব দ্রুতই এর দ্বিতীয় সেশনটি অনুষ্ঠিত হবে যার মাধ্যমে মেটামরফোসিস এর পাঠ এবং আলোচনা শেষ হবে এবং নতুন কোন সাহিত্যকর্ম নিয়ে আয়োজনটি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। পরবর্তী সেশন সম্পর্কে জানতে গুপী বাঘার ফেসবুকে পেজে চোখ রাখতে হবে।

ছবি: আরিফুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *