মাই অটোবায়োগ্রাফি: চার্লি চ্যাপলিন

চার্লি চ্যাপলিন এসেছিলেন শিল্পী পরিবার থেকে। বাবা অভিনেতা, মা গায়িকা। কিন্তু সেই সাজানো সংসার চার্লির ছোটবেলাতেই ভেঙে গিয়েছিল। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এবং তারপর দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করেই টিকে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। অল্প বয়সেই কাজে নেমে পড়েছিলেন তিনি। একসময় থিতু হন অভিনয়ে।

১৯৬৪ সালে মৃত্যুর ১৩ বছর আগে নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ নামের বইটি প্রকাশ করেছিল সিমন অ্যান্ড শাস্টার । নিজের ৮৮ বছরের জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি বইটিতে। নিজের বয়ানের সাথে কোনো প্রমাণাদি যোগ করেননি, শুধুই লিখে গেছেন নিজের মতো।

লেখক হিসেবে অন্যদের তুলনায় চার্লি বেশ অপ্রতিভ, নিজের আত্মজীবনী রচনার ক্ষেত্রেও। এক নাগাড়ে নিজের জীবন নিয়ে লিখে গেছেন তিনি। এ থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি তা হলো ঊনবিংশ শতকের মঞ্চনাটকের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস। মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র- চার্লি চ্যাপলিনের উত্থানের সাথে মঞ্চ এবং সিনেমার সেই সময়ের ছাপ খুব স্পষ্ট।

কিন্তু নিজের জীবনের অনেক কিছুই বাদ দিয়ে গেছেন তিনি। নিজের ভাই, সন্তান ও স্ত্রীদের ব্যাপারে তেমন কিছু লেখেননি চার্লি। এ কারণে বইটির মান কিছুটা হলেও নিচে নেমে গেছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে পাঠকের আলাদা আগ্রহ থাকে সবসময়ই। সেই প্রত্যাশা পূরণ করেননি চার্লি।

তবে নিজের শৈশব এবং অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার সময়গুলো খুব আবেগ নিয়ে লিখেছেন তিনি। এই অংশটাই বইয়ের সেরা অংশ। তবে যখন থেকে জনপ্রিয়তা তাকে ছুঁয়ে দিল তখন থেকেই বইটা আবার পড়ে গেছে। এরপর তা পরিণত হয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের তালিকায়। কবে কোথায় কার কার সাথে চ্যাপলিনের দেখা হয়েছে তার বিস্তর বর্ণনা। এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, উইনস্টন চার্চিল, ওয়েলস। তাঁর কাছের বন্ধু ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস ও ম্যারি পিকফোর্ডের নাম।

বিখ্যাত মানুষদের সাথে দেখা হওয়ার বর্ণনা খুব একটা আকর্ষণীয় নয়। এমনকি বইয়ের এক জায়গায় চার্লি লিখেছেন- ‘এরপর আমি প্রিন্স অব ওয়েলসের সাথে দুপুরের খাবার খেলাম।’ এ ধরনের বর্ণনা আসলেই পাঠকদের হতাশ করে। নিজের ছবি ও দর্শন নিয়েও লিখেছেন চ্যাপলিন, কিন্তু সেগুলো অসম্পূর্ণ।

তবে চ্যাপলিনের স্মৃতিশক্তির প্রশংসা করতে হয়। ৭৫ বছরে বয়সে পৌঁছে জীবনের এতগুলো বছরকে ফিরে দেখেছেন স্বচ্ছ চোখে। নিজের সম্পর্কে লিখেছেন চ্যাপলিন- পর্দায় যতটা সপ্রতিভ পর্দার বাইরে ততটাই লাজুক এবং চাপা স্বভাবের মানুষ তিনি। কাজের ব্যাপারে কখনো কোনো ছাড় দেননি চ্যাপলিন। শিল্পের প্রয়োজনে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছ থেকে জোর করে হলেও অভিনয়টা আদায় করে নিতেন।

কাজের প্রতি এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে ব্যক্তিজীবনে অনুপস্থিত ছিলেন চ্যাপলিন। আর সে কারণেই সংসারে থিতু হতে পারেননি তিনি, বিচ্ছেদ ছিল তাঁর জীবনের অংশ।

শুরুর দিককার হলিউডের অনেক অজানা কথাই উঠে এসেছে চ্যাপলিনের বইয়ে। হলিউডের ইতিহাস যারা জানতে চায় না তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য এই বই।

আত্মজীবনী হলেও ব্যক্তি জীবনের মতো অনেক কিছুই চেপে গেছেন চ্যাপলিন। হাত খুলে লেখেননি। বইটি পড়ার পরও পাঠকদের সাথে একটা দূরত্ব থেকেই যাবে চ্যাপলিনের। হয়তো এটাই চেয়েছিলেন তিনি। একটু আড়ালে থেকেই মানুষকে হাসিয়ে যেতে। আত্মজীবনীর চেয়ে সিনেমাতেই অনেক বেশি খুঁজে পাওয়া যায় চার্লি চ্যাপলিনকে।

লেখাটি এর আগে এনটিভি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্র: হিয়ার দেয়ার বি বুকস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *