শাটিকাপ: বাপরে বাপ!
নতুন এক অভিজ্ঞতা! সিটি অব গড, গ্যাংস অব ওয়াসিপুর বা জাল্লিকাট্টু দেখার পর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ঠিক একইরকম অভিজ্ঞতা শাটিকাপ দেখে। সিরিজ শেষ করে কিছুক্ষণ বসে বসে ভাবলাম, এ আমি কি দেখলাম!
স্ক্রিপ্ট, সিনেমাটোগ্রাফি, অ্যাক্টিং সবই ফাটাফাটি। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সিনেমাটোগ্রাফি। প্রি প্রোডাকশনে যথেষ্ট ঘাম ঝরিয়েছে প্রোডাকশন টিম। লেন্সিং, ফ্রেমিং এখনো চোখে লেগে আছে। বিশেষ কয়েকটা দৃশ্যের কথা বলতেই হয়, প্রথমত, গরু ছিনতাইয়ের সিনটা দুর্দান্ত, মনে হলো যেন কোন মালায়লাম সিনেমার দৃশ্য দেখছি। দৃশ্যের পর দৃশ্য বসিয়ে যে সাসপেন্স তৈরি করা হয়েছে সেজন্য সিনেমাটোগ্রাফারের পাশাপাশি এডিটরেরও প্রশংসা প্রাপ্য।
এরপর রেলস্টেশন থেকে পুলিশ যখন জয়নালের বাইক চেজ করে সেই সিনটা দারুণ! একে তো রাতের সিন, তার উপর মুভিং কিন্তু খুব চমৎকারভাবে অ্যাকশনটা ক্যাপচার করা হয়েছে।
বাজার থেকে ফেরার পথে রশুর চেজিং এবং বিডিআই অফিসারের সাথে ফাইটিং সিনটাও দারুণ। এটা দেখে প্রেমাম ছবির ফাইটিং সিনটার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।
তবে সবচেয়ে সেরা ছিল ফাজুর চেজিং সিন! এটা সেরা! বহুদিন মনে থাকবে! আর বেশি কিছু না বলি। দেখার মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে।
এরপর বলতে হয় ডায়লগের কথা। রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় বলে ভাষা বুঝতে অনেকেরই সাবটাইটেল এর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এটাই এই সিরিজের সৌন্দর্য। হান্ড্রেড পার্সেন্ট লোকাল! কারো উচ্চারণে কোন জড়তা ছিল না। তাতে বোঝা যায় রাজশাহীর স্থানীয় অনেক অভিনয় শিল্পীরাই এই সিরিজে অভিনয় করেছেন। প্রচুর গালাগালি আছে। কিন্তু কোনটাই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি।
অভিনয়ে সবাই সেরা! তবে জয়নাল বা জো-কে এক নাম্বারে রাখবো। জোয়ের স্ক্রিন প্রেজেন্সও বেশি ছিল। একভাবে চরিত্রটা ধরে রাখাটা বেশ কষ্টকর ছিল। অভিনেতা আহসাবুল ইয়ামিন রিয়াদ দূর্দান্ত অভিনয় করেছেন। গ্যাংস অব ওয়াসিপুরের ফায়জাল খানের মত অনেকটা! অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি স্ক্রিপ্ট ও ডায়লগ রাইটারদের একজন। পাশাপাশি এডিটের ফার্স্ট ড্রাফট তার করা।
এই সিরিজটা এত ভালো হওয়ার কারণ এর টিমওয়ার্ক। যারা অভিনয় করেছেন তারা অনেকেই টেকনিক্যাল টিমেও ছিলেন। ডিরেক্টর মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম নিজেই সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন। একইভাবে বাবু চরিত্রে অভিনয় করা ওমর মাসুম চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লিখেছেন। বিডিআই অফিসার উত্তমের চরিত্রে অভিনয় করা অমিত রুদ্র এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার এবং আর্ট ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন।
আমার কাছে মনে হয়েছে শুটিংয়ে কি করতে হবে সেটা আগে থেকেই টিমের সবাই খুব ভালোভাবে রিহার্সাল এবং গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে নিয়েছে। কোথাও কোন ভুল আমার চোখে পড়েনি। আমার দেখা অন্যতম সেরা বাংলা সিরিজ।