অবিশ্বাস্য এক সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ছবি আমেরিকান মেড
ভাবতে পারেন, একই মানুষ সিআইএ এর মত সংস্থার হয়ে কাজ করছে আবার পাবলো এস্কোবারের মত ড্রাগ লর্ডের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন পাচার করছে!
গল্প মনে হলেও ঘটনা সত্য। আর এই ঘটনা যিনি ঘটিয়েছেন তার নাম ব্যারি সিল। ছিলেন একজন চৌকষ পাইলট। চাকরি ছেড়ে ১৯৭০ এর দশকে সিআইএ এর জন্য কাজ করা শুরু করেন। সে সময় ছিল স্নায়ুযুদ্ধের টান টান উত্তেজনার সময়। মধ্য আমেরিকার দেশ যেমন গুয়েতেমালা, নিকারাগুয়া এসব দেশে সোভিয়েতপন্থী, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়।
বিমানে করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীদের বিভিন্ন গোপন স্থাপনার ছবি তোলার কাজ করতেন ব্যারি সিল। এ সময় ব্যারি সিলের উপর নজর পড়ে কলম্বিয়ার মেডিলিন কার্টেলের। মেডিলিন কার্টেল মানে হোর্হে ওচোয়া, পাবলো এস্কোবারদের গড়ে তোলা কোকেন পাচার চক্র। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কড়াকড়ির জন্য কোকেন পাচার করা দূরুহ হয়ে পড়েছিল। তাই মেডেলিন কার্টেল কোকেন পাচারের নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করে।
ওচোয়া, এস্কোবাররা ব্যারি সিলকে কলম্বিয়া থেকে বিমানে কোকেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। আর সেজন্য যে টাকা দেয়া হবে তার অংকটা অবিশ্বাস্য! কলোম্বিয়ান ড্রাগ লর্ডদের হয়েও কাজ শুরু করেন ব্যারি সিল। এই কাজ করতে গিয়ে কলম্বিয়ার পুলিশের হাতেও আটক হন তিনি। আবার তাকে ছাড়িয়ে নেয় সিআইএ।
এবার আসে আরও বড় কাজের সুযোগ। আরকানসাসের ছোট শহর মেনায় নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারি সিলকে। তাকে দেয়া হয় আস্ত একটা এয়ারপোর্ট! কাজ হলো নিকারাগুয়ার বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করা। এসব বিদ্রোহী গ্রুপ পরিচিত ছিল কন্ট্রা নামে। নিকারাগুয়ার সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করছিল তারা। মূলত এরা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মদদে তৈরি সশস্ত্র সংগঠন। সিআইএ এদেরকে টাকা-পয়সা আর অস্ত্র দিতো।
সিআইএ এর হয়ে অস্ত্র নিয়ে যেত ব্যারি সিল। আবার সেই একই বিমানে কলোম্বিয়ান কোকেন নিয়ে ফিরে আসতো যুক্তরাষ্ট্রে। এভাবেই সে গড়ে তোলে টাকার পাহাড়। ঘরে টাকা রাখার জায়গা নেই এমন অবস্থা। শুধুমাত্র ব্যারি সিলের টাকা রাখার জন্য ব্যাংকে আলাদা ভল্ট খোলা হয়। বাড়ির উঠোনের বিভিন্ন জায়গায় টাকা পুতে রাখে ব্যারি সিল।
তবে সুখের দিন শেষ হয়ে আসে তার। সিআইএ, ডিইএ, এফবিআই, স্টেট পুলিশ সবাই তার অর্থের উৎস খুঁজতে নেমে পড়ে। আটক করা হয় তাকে, তবে উপরমহলের নির্দেশে আবার ছেড়েও দিতে হয়। তাকে আরেকটা অ্যাসাইনমেন্ট দেয় ডিইএ।
সেটা হল মেডিলিন কার্টেলের কোকেন পাচারের ছবি তোলা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলোম্বিয়া যায় ব্যারি সিল। ছবি তুলে আনে এস্কোবারদের কোকেন পাচারের। ছবিগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করে রিগ্যান প্রশাসন। সেটা নিয়ে তুমুল হৈচৈ বাঁধে। ব্যারি সিল বুঝতে পারে এস্কোবাররা বাঁচতে দেবে না তাকে। সরকার তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। পালিয়ে বেড়াতে থাকে সে। শেষমেশ আততায়ীর গুলিতেই মারা পড়ে ব্যারি সিল।
পরে বের হয় আরেক তথ্য। ব্যারি সিল যেসব অস্ত্র নিকারগুয়ার কন্ট্রাদের কাছে দিয়েছিল, সেসব অস্ত্র তারা বিক্রি করে দিয়েছিল ইরানের কাছে। এ নিয়েও বেশ সমালোচনায় পড়েছিল আমেরিকার সে সময়কার রিগ্যান প্রশাসন।
এই ছবি দেখলে স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকান প্রশাসনের বিভিন্ন কুকর্ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। যতই জানবেন ততই অবাক হবেন।
ছবির নাম ‘আমেরিকান মেড’। টম ক্রুজ যথারীতি অসাধারণ অভিনয় করেছেন ব্যারি সিলের চরিত্রে। স্ক্রিপ্ট লিখেছেন গ্যারি স্পাইনেলি এবং পরিচালনা করেছেন ডগ লিমান। থ্রিলার টাইপের ছবি যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য মাস্ট ওয়াচ।
লেখাটি এর আগে ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।