ইন্ডিয়ান প্রেডেটর: মার্ডার ইন আ কোর্টরুম (২০২২)
অবিশ্বাস্য এবং লোমহর্ষক।
ইন্ডিয়ান প্রেডেটর সিরিজটাই বেশ ভয়ানক। এর আগে আরও দুটো ডকুমেন্টারি মুক্তি পেয়েছে এই সিরিজের, ‘দ্য বুচার অব দিল্লি’ এবং ‘দ্য ডায়েরি অব আ সিরিয়াল কিলার’। আগের দুটির চেয়ে নতুন মুক্তি পাওয়া ‘মার্ডার ইন আ কোর্টরুম’ বেশি ভয়ঙ্কর। এই সিরিজের তিনটি এপিসোড, প্রতিটি গড়ে এক ঘণ্টার।
সত্যিই যে বাস্তব ফিকশনের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ এই সিরিজের ঘটনাবলী।
দেখলে মনে হবে কোন শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলারের গল্প। প্রত্যক্ষদর্শী, ভূক্তভোগীদের বয়ানে ঘটনার নানা দিকে তুলে ধরা হয়েছে। শোষিত মানুষেরা এক হয়ে ঘুরে দাঁড়ালে কোনো দানবই তাদের সামনে টিকে থাকতে পারে না।
২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট মহারাষ্ট্রের নাগপুর ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে অন্তত ৫০ জন মানুষ আদালত কক্ষের ভেতরে ঢুকে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকদের সামনেই ছুরি, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে গ্যাংস্টার আক্কু যাদবকে। যে কিনা প্রাণের ভয়ে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল।
হামলাকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। পরিস্থিতি এমন ছিল যে পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রকাশ্য দিবালোকে আক্কু যাদবকে কুপিয়ে হত্যা করে নির্বিঘ্নে আদালত চত্বর থেকে চলে যায় কাস্তুরবা নগরের বাসিন্দারা। পোস্টমর্টেমে আক্কুর শরীরে ৭৫টি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল।
কেন আক্কুর উপর এই নৃশংসতা?
দীর্ঘদিনের অত্যাচার, নিপীড়ন আর পুলিশ-প্রশাসনের নীরবতার বিরুদ্ধে এটা ছিল কস্তুরবা নগর বস্তির দলিত সম্প্রদায়ের নারীদের প্রতিবাদের ভাষা। আক্কুর অত্যাচার সহ্য করতে করতে যাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল।
১৯৯০ এর দশকে কস্তুরবা নগরে আক্কু ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিল। চাঁদাবাজি, খুন, বাড়ি দখল, ধর্ষনের কারণে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো ওই এলাকার দরিদ্র বাসিন্দারা। অন্তত ৪০ জন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে আক্কুর বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ১০ বছরের শিশুও রয়েছে, অনেকেই দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ডকুমেন্টারিতে কয়েকজন ভিক্টিম তাদের দু:সহ যন্ত্রণার কথা বলেছেন ক্যামেরার সামনে এসে।
আক্কুর অত্যাচারে নিজেদের বসত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় অনেক বাসিন্দা। কারণ, পুলিশকে জানালেও পুলিশ কখনো তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি। দলিত সম্প্রদায় অত্যন্ত গরীব এবং বেশিরভাগই দিনমজুর বা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এক সময় এদেরকে অচ্ছুত বলে গণ্য করা হতো ভারতীয় সমাজে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে কস্তুরবা নগরের মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আক্কুকে খুন করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভিক্টিম, আইনজীবী, পুলিশ, আক্কুর বন্ধু, অ্যাক্টিভিস্টসহ যারা এই ঘটনার সাথে নানাভাবে জড়িত ছিলেন তাদের প্রায় সবারই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। ফলে সম্ভাব্য সবদিক থেকেই ঘটনা প্রবাহগুলোকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।
সংবেদনশীল যে কোন মানুষই বিচলিত হবেন এই ডকুমেন্টারি দেখে।