ট্রাম্বো (২০১৫)

ইমারত যেমন একজন স্থপতির হাত দিয়ে শুরু হয় তেমনি সিনেমা শুরু হয় একজন স্ক্রিপ্টরাইটারের হাত ধরে। ডাল্টন ট্রাম্বো হলিউডের খুবই দাপুটে একজন স্ক্রিপ্টরাইটার ছিলেন। এই দাপট শুধু তার টাইপরাইটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল মাথাতেও। রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, ছিলেন কমিউনিস্ট।

হলিউডের ইউনিয়ন নিয়েও ছিলেন সক্রিয়। আর টালমাটাল বিশ্ব রাজনীতির সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর স্নায়ুযুদ্ধের চাপে পড়ে হয়ে গেলেন ভিলেন। আমেরিকার মত পুঁজিবাদি দেশে বসে কমিউনিজম, তাও আবার হলিউডের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়? জেলে যেতে হল বেচারাকে। হলিউডে নিষিদ্ধ করা হল তাকে।
যে ট্রাম্বো অভিজাত জীবনে অভ্যস্ত তাকে নেমে আসতে হল পথে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করলেন। তবে ছদ্মনামে। একটা নয় ১০/১২ টা নামে লিখতে থাকলেন। ট্রাম্বোর লেখনী আর গল্পভাবনা এতই আধুনিক ছিল যে তা দর্শকরা লুফে নেবেই, এটা একরকম গ্যারান্টি। কিন্তু ট্রাম্বো যেহেতু নিষিদ্ধ সিনেমার কোথাও তার নাম উল্লেখ করা যাবে না।

সেই ছদ্মনামেই একগুঁয়ে, জেদি স্ক্রিপ্ট রাইটার ডাল্টন ট্রাম্বো লেখেন ‘রোমান হলিডে’। কিন্তু স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে নাম যায় ইয়ান ম্যাককেলেন হান্টারের। ‘এক্সোডাস’, ‘স্পার্টাকাস’, ‘থার্টি সেকেন্ডস ওভার টোকিও’সহ বহু স্ক্রিপ্ট লিখেছেন ট্রাম্বো। ছদ্মনামেই জেতেন সেরা স্ক্রিপ্টরাইটারের অস্কার। একবার নয় কয়েকবার।

এক সময় ছদ্মনাম ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ট্রাম্বো। বলেন, ইয়ান ম্যাককেলেন নয় তিনিই লিখেছেন ‘রোমান হলিডে’। শুরু হয়ে যায় তুমুল হৈ চৈ। কিন্তু ট্রাম্বো তখন রেসের তেজী ঘোড়া। সব প্রোডিউসারের চাই ট্রাম্বোর স্ক্রিপ্ট। তাঁকে তখন আর কে আটকায়! তুলে নেয়া হয় তার উপর নিষেধাজ্ঞা, জয় হয় জেদি স্ক্রিপ্ট রাইটারের।

ডাল্টোন ট্রাম্বোর আত্মজীবনী ‘ডাল্টোন ট্রাম্বো’ লিখেছিলেন ব্রুস আলেকজান্ডার। আর সেই আত্মজীবনী অবলম্বনে ২০১৫ সালে বানানো হয় ‘ট্রাম্বো’ ছবিটি। এতে ট্রাম্বোর ভূমিকায় অভিনয় করেন ব্রায়ান ক্র্যান্সটোন। অস্কারে সেরা অভিনেতার মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি।

‘ট্রাম্বো’ ছবির মূল কথাই হচ্ছে আপনি কি লিখবেন, কি ভাববেন, কি বিশ্বাস করবেন সেটা কেউ ঠিক করে দিতে পারেনা। এক্ষেত্রে আপনি সবসময়ই স্বাধীন। কিন্তু সেই স্বাধীনতা কি আমরা ভোগ করতে পারি??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *