দ্য সুইমার্স (২০২২)
যুদ্ধ মানুষের জীবনকে তছনছ করে দেয়। তবে মানুষ যুদ্ধের কাছে হার মানতে পারে না। তারা আবার ঘুরে দাঁড়ায়, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে শুরু করে নতুন জীবন। এমনই এক হার না মানা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘দ্য সুইমার্স’ ছবিটি।
সিরীয় দুই সাতারু বোন ইউসরা মারদিনি এবং সারা মারদিনির জীবনের ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত ছবিটিতে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংগ্রাম এবং একজন সাতারুর কঠিন অধ্যাবসায়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
ইউসরা এবং সারার বাবা ছিলেন একজন সাতারু, তিনিই ছিলেন ওদের দুজনের কোচ। বাবার দেখানো স্বপ্নে ভর করে ইউসরা চায় সিরিয়ার হয়ে সাতারু হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নিতে। কিন্তু তাতে বাধ সাধে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। এরকম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দুই বোন সিদ্ধান্ত নেয় তারা জার্মানি যাবে। তুরস্ক থেকে এজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস। তারপর সেখান থেকে জার্মানি।
তবে শুনতে যতটা সহজ মনে হয়, তাদের যাত্রাটা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয় তারা। ছোট একটি নৌকায় তাদের সাথে আরও ছিলেন বিভিন্ন দেশের ১৮ জন অভিবাসন প্রত্যাশী। যাদের মধ্যে নারী এবং শিশুও ছিল। মাঝ সমুদ্রে সেই নৌকা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নৌকা চালু হলেও এত বেশি মানুষ নিয়ে সেটি বেশি দূর যেতে পারতো না। তাই ইউসরা এবং সারা নৌকা থেকে নেমে সাড়ে তিন ঘন্টা এজিয়ান সাগরে সাতরে তীরে পৌঁছান। এভাবে আরও নানা প্রতিকূলতা ছাপিয়ে তারা এক সময় পৌঁছে যায় তাদের স্বপ্নের বার্লিনে।
সিরিয়া থেকে জার্মানি পৌঁছাতে তাদের ২৫ দিন সময় লেগেছিল। কখনো গভীর সমুদ্রে ছোট নৌকায়, কখনো হেটে, কখনো গাড়িতে, কখনো কাভার্ড ভ্যানের ভেতর লুকিয়ে, কখনো ঝুঁকি নিয়ে বর্ডার পার হয়ে এগিয়েছে তারা।
বার্লিনে অভিবাসন প্রত্যাশী হিসেবে নাম লেখায় তারা। এরপরই ইউসরা বেরিয়ে পড়ে সুইমিং ক্লাবের উদ্দেশ্যে। সেভন নামে একজন কোচকে পেয়ে যায় ঘটনাচক্রে। ২০১৬ এর রিও অলিম্পিকস এর প্রস্তুতি চলছে তখন। ইউসরার স্বপ্ন ছিল সিরিয়ার হয়ে অংশ নেবে সে। তখন তার সেই সুযোগ নেই। তবে সেবারই প্রথম রিফিউজি অ্যাথলেটদের নিয়ে আলাদা একটি দল গঠন করা হয় অলিম্পিকে। সেই দলের হয়ে অংশ নেন ইউসরা।
জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে মানুষের এগিয়ে চলার অনবদ্য গল্পই বলা হয়েছে এই ছবিতে, যেখানে ইউসরা মারদিনির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নাটালিয়া ইসা এবং সারা মারদিনির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মানাল ইসা।
ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্যালি আল হোসাইনী। দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ক্রিস্টোফার রস। এ বছর টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ নভেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ছবিটি।
সূত্র: টাইম ডটকম, আইএমডিবি, অলিম্পিকস ডটকম।