অরুণ কুমার থেকে উত্তম কুমার

উত্তম কুমার। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ আর বাঙালির মহানায়ক। আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে উত্তম-সুচিত্রা বাঙালির সাদা-কালো সিনেমা যুগের প্রতীকী রূপ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

তবে উত্তমের চলচ্চিত্রযাত্রা সহজ ছিল না। কলকাতার পোর্টে কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেতে যথেষ্ট খাটতে হয়েছে তাঁকে। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি শুরুতে মঞ্চেও অভিনয় করতেন তিনি।

উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল ‘দৃষ্টিদান’।  ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। পরিচালক ছিলেন নীতিন বোস। তবে তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি ‘মায়াডোর’, সেটি মুক্তি পায়নি।

তবে উত্তমকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিটি। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে প্রথম সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন উত্তম। আর সেই থেকেই উত্তম-সুচিত্রা জুটির পথচলা। এই ছবিটি পরিচালনা করেন নির্মল দে।

উত্তমের ঠোঁটে জনপ্রিয় হয়েছে বাংলা ছবির অসাধারণ সব গান। পর্দায় বেশির ভাগ সময়েই উত্তমের জন্য গান গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও কিশোর কুমার। উত্তম-সুচিত্রা জুটির মতো উত্তম-হেমন্ত কিংবা উত্তম-কিশোর সুরের জুটিও বাঙালির কাছে সমানভাবে কদর পেয়েছে। উত্তম কুমারের জনপ্রিয় প্রায় সব গানই গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা।

উত্তম-সুচিত্রা ছাড়াও উত্তম-সুপ্রিয়া, উত্তম-সাবিত্রীও জুটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। উত্তমের স্ত্রী ছিলেন গৌরী দেবী। যদিও সংসার জীবনে সুখী ছিলেন না মহানায়ক। জীবনের শেষ ১৭টি বছর নিজের বাড়ি ছেড়ে উত্তম উঠেছিলেন অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর বাড়িতে। উত্তম-সুপ্রিয়ার প্রেম এবং সংসার নিয়ে ঘরে-বাইরে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু আমৃত্যু দুজন ছিলেন দুজনের পাশে।

১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মেছিলেন উত্তম কুমার। তাঁর বাবা সাতকড়ি চ্যাটার্জী এবং মা চপলা দেবী। ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

লেখাটি এর আগে এনটিভি অনলাইন-এ প্রকাশিত হয়েছে। মূল লেখার পরিবর্ধিত সংস্করণ এই লেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *